দক্ষ জনশক্তি ব্যাতিত কোন ভাবেই যে দেশের উন্নতি সম্ভব নয় এই অনুধাবন থেকে ও দেশ-বিদেশের শ্রমবাজারের বাস্তব চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশের কারিগরি শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার নানাবিধ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ও নিরন্তন গ্রহন করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের নিয়ন্ত্রানাধীন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে “Skills and Training Enhancement Project (STEP)” শীর্ষক প্রকল্প। প্রাথমিক ছয় বছর মেয়াদি (জুলাই ২০১০ - জুন ২০১৬) প্রকল্প সফল ভাবে শেষ হওয়ায় এ প্রকল্প পরবর্তী তিন (৩) বছরের (জুলাই ২০১৬ - জুন ২০১৯) জন্য বাড়ানো হয়েছে। সফল এ প্রকল্পে যৌথভাবে অর্র্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার, বিশ্বব্যাংক ও কানাডা। কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন অব্যাহত রাখার নিমিত্তে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহ মোট ১৭৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। তারমধ্যে প্রাথমিক ৮৪৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের পর প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি সন্তোষজনক হওয়ায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহ আরো ৯৩৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ করেছে।
STEP প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুণগত মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে আর্থ-সামাজিকভাবে অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের নিকট কারিগরি শিক্ষাকে সহজলভ্য করে তোলা ও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র ও বেকারত্ব দূর করা। প্রকল্পটির কতিপয় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছে:
ক) সরকারের দারিদ্র বিমোচন কৌশলের অংশ হিসেবে কারিগরি ও পেশাগত (ভোকেশনাল) শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুণগত মান ও প্রাসঙ্গিকতা বৃদ্ধি করা এবং আর্থিকভাবে অনগ্রসর পরিবারের শিক্ষার্থীদেরকে বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা লাভের অনুক‚ল পরিবেশ সৃষ্টি করা ;
খ) Industry Skills Council Ges National Skills Development Council প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় সহায়তা প্রদান এবং এসএসসি (ভোকেশনাল) কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সার্বিকভাবে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শক্তিশালী করা;
গ) কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সংস্থা, যেমন - কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; এবং
(ঘ) প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন কাঠামো সৃষ্টি, যোগাযোগ কৌশল বাস্তবায়ন এবং পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম।
প্রকল্পের কম্পোনেন্টসমূহ: স্কিলস এ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের চারটি কম্পোনেন্ট রয়েছে। কম্পোনেন্টসমূহের আওতাভুক্ত বিভিন্ন কার্যক্রম ( প্রকল্প সমাপ্তি পর্যন্ত) তথ্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
কম্পোনেন্ট ১ : কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষার গুণগত মান ও প্রাসঙ্গিকতা বৃদ্ধি।
সাব-কম্পোনেন্ট ১.১: ডিপ্লোমা পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকে প্রায় দশ কোটি টাকা Implementation Grant প্রদান ও শিক্ষার্থীদেরকে মাসে ৮০০ টাকা হারে বৃত্তি প্রদান করা।
সাব-কম্পোনেন্ট ১.২ : স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদান
কম্পোনেন্ট ১ এর অগ্রগতি:
কম্পোনেন্ট ২ : পাইলটিং ইন Technical and Vocational Education and Training (TVET)
সাব-কম্পোনেন্ট ২.১ : এ কম্পোনেন্টের আওতায় Industry Skills Council (ISC) গঠনে সহায়তা প্রদান এবং National Skills Development Council (NSDC)-কে কারিগরি ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান।
সাব-কম্পোনেন্ট ২.২ : SSC (Vocational) কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা।
সাব-কম্পোনেন্ট ২.৩ : Recognition of Prior Learning বা RPL সার্টিফিকেট প্রদান।
কম্পোনেন্ট ২ এর অগ্রগতি:
কম্পোনেন্ট ৩ : Institutional Capacity Building
কারিগরি শিক্ষা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান যেমন - কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধিসহ চলমান কার্যক্রম আরও জোরদার করা।
কম্পোনেন্ট ৩ এর অগ্রগতি:
কম্পোনেন্ট ৪ : Project Management, Communication and Monitoring & Evaluation
সাব-কম্পোনেন্ট ৪.১ : প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন কাঠামো স্থাপন এবং যোগাযোগ কৌশল বাস্তবায়ন।
সাব-কম্পোনেন্ট ৪.২ : প্রকল্পের কার্যক্রমসমূহের বাস্তবায়ন, অগ্রগতি ও ফলাফল পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন।
কম্পোনেন্ট ৪ এর অগ্রগতি:
উপসংহার : স্কিলস এ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট সরকারের দারিদ্র ও বেকারত্বমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ দক্ষ এক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য পূরনের উদ্দেশ্যে দৃপ্ত প্রত্যয়ে প্রকল্প সমাপ্তি (৩১ ডিসেম্বর ২০১৯) পর্যন্ত নিরন্তর কাজ করেছে। কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, ভর্তি ও পাসের হার বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির এই ধারা অব্যাহত থাকলে, আশা করা যায়, দেশের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠিকে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা এবং সরকার ঘোষিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করার রূপকল্প অর্জন সহজতর হবে।
“কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
বেকারত্বমুক্ত সমৃদ্ধ জীবন”